কেরির তত্পরতা : মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন স্পন্দন

P5 kerir-tatparataরয়টার্স: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কূটনৈতিক তত্পরতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। চলতি মাসেই বর্তমান আলোচনা প্রক্রিয়ার মেয়াদ শেষ হবার আগে সমাধানসূত্রের কাঠামো স্থির করার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।
মস্ত বড় আশাবাদীরাও যখন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার সাফল্য নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছে, তখনও হাল ছাড়ার পাত্র নন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর এ জন্যেই ঘন ঘন মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন, দুই পক্ষ ও আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি। এবার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দুই দুবার আলোচনা করেছেন। মঙ্গলবার সেই বৈঠকের পর আবার ছুটেছেন ইউরোপীয় সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে। কেরি সম্ভবত বুধবার আবার রামাল্লায় গিয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে আলোচনা করবেন। চলতি পর্যায়ের আলোচনার মেয়াদ স্থির করা হয়েছে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত।
আলোচনায় অগ্রগতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে শনিবার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি না দেওয়ায় আলোচনা বানচাল হবার উপক্রম দেখা যায়। তবে, বিলম্ব সত্ত্বেও বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা যাতে আলোচনা ছেড়ে চলে না যায়, ইসরায়েল সেই আশ্বাসও দাবি করছে। ফিলিস্তিনিরা চাইছে, ভবিষ্যতেও কোনো শর্ত ছাড়াই ইসরাইল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিক।
দুই পক্ষই একে অপরের উপর একাধিক শর্ত চাপাতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার মূল অন্তরায়গুলিও দূর হয়নি। ফিলিস্তিনিদের অটল দাবি, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে, আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ১৯৬৭ সালের সীমান্তকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং আরও প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, যাদের মধ্যে মারওয়ান বারগুতির মতো জনপ্রিয় নেতার নাম রয়েছে। ইসরাইল এমন নির্দিষ্ট শর্ত ছাড়াই আলোচনা চালাতে চায়। বিশেষ করে নেতানিয়াহু সরকারের জোটসঙ্গী চরম রক্ষণশীল দলগুলি ফিলিস্তিনিদের কোনোরকম ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়।
এমন প্রেক্ষাপট আগেও অনেকবার দেখা গেছে। শান্তি প্রক্রিয়ায় কোনো রকম অগ্রগতি দেখা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এবারও সেই একই পরিণতি দেখা যাবে না, এমন নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। ওবামা প্রশাসন ও সামগ্রিকভাবে মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গন আর আগের মতো ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থন দেখাচ্ছে না। যদিও সে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে মার্কিন সংহতি অটুট রয়েছে। ইউরোপ ইসরাইলের প্রতি অনেক কড়া মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে, এমনকি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা চলছে। অধিকৃত এলাকায় ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে ইউরোপ এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে দেশের মধ্যেও বিতর্ক চলছে। দুই রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধানসূত্র বিফল হলে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে একই রাষ্ট্রে থাকতে হলে দেশের মৌলিক চরিত্রই পুরোপুরি বদলে যাবে। দুই সমপ্রদায়ের জনসংখ্যার বিশাল তারতম্যই সেই অঘটন ঘটাতে যথেষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘অ্যাপারথাইড' জামানায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি যে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দেখানো হতো, আজকের যুগে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সেই আচরণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠছে। তাই অনেকে বলছেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য নয় ইসরায়েলের নিজস্ব স্বার্থেই অবিলম্বে এক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপন
addd
addd
addd
addd

Perfect Facebook Like Box Sidebar