ফলি মাছের অভাবে চন্দ্রমোহনের ছেলেরা মারা গেল

বিপম চাকমা 

ddসে বছর বসন্তকালটা এল একটু নির্দয়ভাবেই। মানুষের মনে বসন্তের উৎফুল্লতা আতঙ্কে পরিণত হয়ে বছরটা হয়ে গেল উদাহরণের যোগ্য। এখনো কথা প্রসঙ্গে সালের হিসাব ভুলে গেলে লোকে বলে ওঠে—‘ওই যে, যে বছর সবার গায়ে জলবসন্ত হয়ে গেল, ফলি মাছের অভাবে চন্দ্রমোহনের ছেলেরা মারা গেল...।’ তো এমন উদাহরণের যোগ্য বসন্তদিনে মানুষের মনে কোকিলের ‘কুহু’ ডাক কখনোই উদাসী হওয়ার মতো আবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। তখন বরং সবারই মনে হয়েছিল যে কোকিল পক্ষীটা ‘কুহু’ শব্দে প্রেমের আহ্বান নিয়ে তাদের গান শোনাতে আসেনি, এসেছে অমঙ্গলের বার্তা নিয়ে।
স্বাভাবিক অবস্থায় কোকিলের ‘কুহু’ ডাক শুনলে লোকজন বুঝতে পারে বসন্তকাল এসেছে। ‘বিজু’ উৎসবের আর বেশি দেরি নেই। বিজু উৎসবকে ঘিরে হাজারো পরিকল্পনার রং ছিটিয়ে নিজেদের মধ্যে নিত্য আলাপের উপলক্ষ বানানো ছাড়া লোকজনের কাছে কোকিল পক্ষীর খুব বেশি গুরুত্ব আছে বলে কখনো মনে হয়নি। অথবা কোকিল যে পাখি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী, এ কথাও তাদের চিন্তায় কখনো আসেনি। সুতরাং কোকিল পক্ষীটা শীতের শেষে এসে বসন্তজুড়ে গান গেয়ে বর্ষায় নির্বিঘ্নে চলে গেছে। নিজের রক্তচক্ষু থাকলেও অন্যের রক্তচক্ষুতে পড়তে হয়নি। কিন্তু সে বছর বসন্তকালটা ব্যতিক্রমী বলেই কিছু কোকিল নির্বিঘ্নে আর ফিরে যেতে পারেনি। কিছু মারা গেল গুলতির আঘাতে আর কিছু ফিরে যেতে পারলেও চিরদিনের মতো নিজেকে পঙ্গু বলে স্বীকার করে তবেই ফিরে যেতে পারল। নিরীহ কোকিলের ওপর মানুষের আক্রোশটা আর কিছু নয়, কোকিলের ‘কুহু’ ডাকটা মানুষের কানে ‘উঁহু’ শোনা।
জলবসন্তের প্রাদুর্ভাবে মানুষ এতই ব্যতিব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল যে কেউ কেউ বলতে শুরু করল, ‘শুনছো, কোকিলটা আসলে “কুহু” শব্দে গান করছে না, “উঁহু” বলে আমাদের দুরবস্থার প্রতি ঠাট্টা করছে।’ তখন থেকেই লোকজন কোকিলের ‘কুহু’ ডাকটা ‘উঁহু’ শুনতে শুরু করল। 
গ্রামের বেকার ছেলেদের প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল কোকিল নিধন। তাদের সঙ্গে যোগ দিল ছোট ছেলের দল। যখনই কোনো দিকে শোনা যাচ্ছে ‘কুহু’, অমনি সকলে হইহই করতে করতে দৌড়াতে লাগল গুলতি হাতে কোকিল মারার জন্য। যেন কোকিল জাতটাকে নির্বংশ করে ছাড়বে।
কোকিল জাতের সৌভাগ্য বলতে হবে এই জন্য যে ঘটনাটা অনেক বেশি আধুনিক কালের। ফলে জলবসন্ত প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে লোকজনের কানে শোনা কোকিলের ‘উঁহু’ ডাকের অদৃশ্য সম্পর্ককে ঘিরে গড়ে ওঠা গুজব শেষ পর্যন্ত কোনো কুসংস্কারে পরিণত হয়নি এবং ফি বছর কোকিল নিয়ম মোতাবেক ‘কুহু’ শব্দে ডেকে গেলেও জলবসন্তের প্রাদুর্ভাব আর না ঘটায় লোকজন অদৃশ্য সম্পর্কের কথাটা নিজেদের অজান্তে ভুলে গেল।
জলবসন্ত প্রাদুর্ভাবের বছরে চন্দ্রমোহনই তাদের গ্রামে প্রথম কোকিল মারার কৃতিত্ব দেখাতে পারল। গুজবটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চারদিকে ধুম লেগে গিয়েছিল কোকিল নিধনের। আশপাশের সর্বত্র, খুব কমসংখ্যক বয়স্ক ছাড়া প্রায় সব শিশুই জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কোনো এক অদৃশ্য কারণে চন্দ্রমোহনের যমজ দুই ছেলে তখনো দিব্যি অন্যদের উপহাস করে সুস্থ দেহে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর কোকিলের প্রতি সমান উৎসাহ নিয়ে গুলতি ছুড়ছিল। কিন্তু তখনো তারা বুঝতে পারছিল না যে কোকিল মারা, বাবা-মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা তাদের মতো ছোকরাদের কাজ নয়। তবু তাদের শিশুমনে উৎসাহ এমনভাবে গেড়ে বসেছিল যে কোকিলের দিকে চোখ রেখে ঊর্ধ্বমুখী ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে কখন যে তাদের হাঁটুর চামড়া, পায়ের নখ এখানে-ওখানে উঠে গিয়েছিল, এসবের প্রতি তাদের মোটেই কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না।
একদিন দুপুরবেলা চন্দ্রমোহন ‘জীবনটা ভাবনাহীন এবং সাধারণ’—এ কথা ভাবতে ভাবতে তার ছেলেদের পাশে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ উঠোনের পাশে কাঁঠালগাছের ফাঁকে ‘কুহু’ শব্দে ডেকে উঠল একটা দুর্ভাগা কোকিল। চন্দ্রমোহন ঠিক সেই মুহূর্তে ঘুম থেকে জেগে উঠে সন্দেহের দোলাচলে দুলতে দুলতে কিছুক্ষণ ছাদবিহীন ঘরের চালের দিকে তাকিয়ে থেকে জাগার ঠিক পরমুহূর্তে কোকিল ডেকে উঠেছিল নাকি কোকিলের ডাকে তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল মনে করার চেষ্টা করল। শেষে অর্থহীন এই চিন্তা বাদ দিয়ে দুই ছেলে যাতে জেগে না ওঠে, খুব সন্তর্পণে ছেলেদের গুলতি হাতে নিয়ে সে চুপিচুপি কাঁঠালগাছের নিচে এসে দাঁড়াল এবং আশ্চর্যজনকভাবে দক্ষ শিকারির মতো একটিমাত্র গুলতি ছুড়ে চিরদিনের জন্য কোকিলের ডাক স্তব্ধ করে দিল। মুহূর্তে কোকিলটা মাথার মগজ হারিয়ে তার পায়ের কাছে ঝুপ করে এসে পড়ল।
কাকতালীয়ভাবে পরদিন থেকেই চন্দ্রমোহনের যমজ দুই ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হলো। একদিন পর প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে শরীরের এতটুকু জায়গা খালি না রেখে জলবসন্ত দেখা দিল। গ্রামের লোকজন এ ঘটনায় আরও বেশি হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। আড়ালে তারা এটাকে কোকিল মারার অভিশাপ বলেই চিহ্নিত করল। আড়ালে বলাবলি করলেও লোকজন এ অভিশাপের কোনো প্রায়শ্চিত্ত বাতলে দিতে পারল না। আশপাশের দশ গ্রামের সবচেয়ে বৃদ্ধ লোকটিও অভিজ্ঞতা-বহির্ভূত এমন একটি অদ্ভুত ঘটনার প্রথা বা সংস্কার-উল্লেখিত কিংবা শাস্ত্রসিদ্ধ নিদান বলতে পারল না। ফলে চন্দ্রমোহন গতানুগতিক চিকিৎসার দ্বারাই আরোগ্যলাভের চেষ্টা করতে লাগল, ‘খেতে হবে কেদাবাত্তা শাকের ঝোল, গোসল করতে হবে দেশি নিমপাতাসেদ্ধ পানি দিয়ে এবং পথ্য হিসেবে তেলবিহীন ফলি মাছ আর ফোসকা শুকিয়ে আসার সময় গরুর দুধ।’
ব্যবস্থাপত্র শোনার পর চন্দ্রমোহন এক বুক জমে থাকা শ্বাস ত্যাগ করে নিজেকে একটু হালকা করল। ‘কেদাবাত্তা’ শাক তাদের পায়খানা ঘরের পেছনে প্রায় জঙ্গল হয়ে আছে। যদিও গরুর দুধ সংগ্রহ করা অনেক বেশি দুঃসাধ্য হবে। এখানে খুব কমসংখ্যক লোকই গরু পালনের মতো ধৃষ্টতা দেখায়, বিশেষত যারা কাপ্তাই হ্রদের পানির কাছাকাছি থাকে। আর ফলি মাছের জন্য বিশাল হ্রদ তো আছেই।
চন্দ্রমোহন প্রথম হোঁচটটা খেল শাক তুলতে গিয়ে। যেখানে সে জঙ্গল দেখে গিয়েছিল তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। এত দিনে লোকজন খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। শাকের গোড়া থেকে একটা একটা করে পাতা ছড়িয়ে কোনোমতে মুঠখানিক পাতা সংগ্রহ করতে পারল। এ দিয়ে বড়জোর দুই কাপ ঝোল তৈরি হবে। নিমপাতা সংগ্রহ করতে গিয়েও একই অবস্থা। দেশি নিম আগেও খুব বেশি ছিল না, এখনো নেই। যাও-বা দু-একটা বিদেশি নিম কারও কারও বাড়িতে আছে, কিন্তু সেগুলো শীতের শেষে খাজনা হিসেবে সব পাতা মাটিকে দিয়ে শূন্য, উদ্বাহু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারে, সবার শেষে রোগ তার বাড়িতে ভর করায় সে এমন বিপদে পড়েছে। ইতিমধ্যে রোগাক্রান্ত লোকজন ব্যবহার করার জন্য তুলে নিয়ে গিয়ে সব শেষ করে ফেলেছে। তার মনে খেদ জাগল রোগটা কেন সবার আগে তার ছেলেদের হয়ে গেল না।
শাকপাতার আশা বাদ দিয়ে চন্দ্রমোহন নামে ফলি মাছ শিকারে। ছোট মাছ ধরার ফাটাফুটা জাল যা আছে তাই নিয়ে হ্রদের পানি চষে বেড়ায়। সন্ধ্যা এবং ভোরে যথারীতি খালি হাতে ফিরে আসে। মাছ বলতে যা আটকায়—দু-একটা পুঁটি আর প্রতিদিন দু-তিনটা করে বড় নাইলোটিকা। বিদেশি মাছ। বিশেষত মাছগুলো হ্রদের পানিতে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে অন্য মাছগুলো যেন বাচ্চা ফোটানোয় একটু বিরতি দিয়েছে। যেন বংশবিস্তারে তাদের কত শত বছরের ক্লান্তি, এবার বুঝি একটু বিশ্রাম মিলল। আর মাছগুলোও কী অদ্ভুত দ্রুততায় হ্রদের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। এখানে-ওখানে ঝাঁক বেঁধে হাপুস হাপুস করে জলের ওপর মুখ নাড়ে। এত বড় হ্রদ কীভাবে অবলীলায় দখল হয়ে গেল বিদেশি মাছগুলোর কাছে। বলা যায়, জালে আটকে এরাই এখন জেলেদের সম্মান রক্ষা করে।
কিন্তু এ ভিনদেশি মাছে চন্দ্রমোহনের কোনো লাভ নেই। এখন মণ দরে জালে আটকালেও এগুলো দিয়ে তার প্রয়োজন মিটবে না। তার দরকার প্রতিদিন দু’চারটা করে ফলি মাছ। 
এর মধ্যে চন্দ্রমোহনের অনুকূলে কোনো ঘটনাই ঘটে না। কেবল দিন দিন ছেলেদের অবস্থার অবনতি দেখে তার কপালের ভাঁজ ক্রমে ঘন আর মোটা হয়। শূন্য ফলাফল সত্ত্বেও হ্রদের পানিতে ছোটাছুটি বৃদ্ধি পায়। দু’দিন আগে একটা ফলি মাছ আটকালেও মাথাটা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না, সবটাই ভোঁদড়ে খেয়ে গেছে। 
ফলি মাছের জন্য চন্দ্রমোহনের এই ব্যতিব্যস্ততা দেখে লোকজন এটাকে পাগলামো হিসেবে সাব্যস্ত করে। লোকজনের এই মনোভাবকে পাত্তা দিয়ে ফলি মাছের জন্য তার অস্থিরতাকে কোনো পাগলামো নয় বরং যথেষ্ট যৌক্তিক—এটা বোঝাতে চন্দ্রমোহন কোনো সমাবেশের আয়োজন করে না। তবে যাকে যেখানে পায় একবার জিজ্ঞাসা করতে ভুল করে না, কারও জালে বা বড়শিতে কোনো ফলি মাছ আটকেছে কি না। এ ছাড়া তার আর করার কীই বা আছে? কেদাবাত্তা শাক নেই, নিমপাতা সব ঝরে গেছে, গরুর দুধ দুষ্প্রাপ্য, কেবল ‘পাওয়া যেতে পারে’ এই সম্ভাবনা নিয়ে এখনো একমাত্র ফলি মাছটাই স্বপ্নের মতো ঝুলে আছে। সুতরাং জুয়া খেলায় যে মনোভাব নিয়ে লোকজন বাজি রাখে, চন্দ্রমোহনও ঠিক একই মানসিক অবস্থায় ছুটতে থাকে ফলি মাছের সন্ধানে। 
যেখানে পৃথিবীতে তার দুটো মাত্র যমজ ছেলে এবং ডাক্তার বলে দিয়েছে, তার স্ত্রী অমলাপুদি আর কখনো মা হতে পারবে না। যমজ দুই ছেলে জন্মের সময়ই বাচ্চা হওয়ার থলি কেটে বাদ দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় ছেলেদের অসুস্থতাকে পুঁজি করে কোনো মারাত্মক রকমের বাজে দুর্ঘটনা যদি চন্দ্রমোহনের পিতৃত্বকে এলোমেলো করে দেয় তাহলে পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের কোনো মূল্যই থাকবে না। এ ক্ষেত্রে চন্দ্রমোহনের অস্থির না হওয়াটাই অস্বাভাবিক।
চন্দ্রমোহনের এই অস্থিরতা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায় ছেলেরা চুরি করে ভাজি নাইলোটিকা খাওয়ার পর জলবসন্তের ফোসকা আরও টসটসে হয়ে ওঠায়। অযৌক্তিকভাবে তার মনের সব ক্ষোভ গিয়ে পড়ে নাইলোটিকার ওপর। এর পর থেকে জালে আটকালেও কোনো নাইলোটিকা আর বাড়ি নিয়ে আসে না। জাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েই দু-তিন টুকরো করে হ্রদের পানিতে ছুড়ে দিয়ে ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে। 
কিছুদিন পরে এক অপ্রত্যাশিত এবং অবিশ্বাস্য ঘটনায় চন্দ্রমোহন যারপরনাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। বুঝতে পারে না এ ধরনের ঘটনায় তার কী করা উচিত। জাল থেকে মাছ খুলতে গিয়ে সে খেয়াল করে, তার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। হঠাৎ কী যেন খেয়াল হলে পানির ওপরে জাল উঁচিয়ে টেনে ধরে, যতদূর পানি থেকে ওপরে ওঠানো যায়। প্রথমে দু-একটা, তারপর অসংখ্য সাদা মাছে ভরে গেছে বিশহাতি আধছেঁড়া জালটা। এর মধ্যে অনেকগুলো ফলি মাছ। সবে ভোর হতে শুরু করেছে। মাছের সাদা অবয়ব আবছা বোঝা যায়। জালের শেষ পর্যন্ত দেখার ইচ্ছায় হাত ওপরে তুলতে তুলতে ভারসাম্য হারিয়ে নৌকা থেকে ঝুপ করে পানিতে পড়ে যায়। 
তার মনে হয় এসবই জলদেবীর লীলা। এত দিন যেন হ্রদের সব ফলি মাছ এক জায়গায় জড়ো করার জন্যই সে ব্যস্ত ছিল। তাই একটা মাছও জালে আটকায়নি। মুহূর্তে চন্দ্রমোহনের পৃথিবীটা ফলি মাছময় হয়ে ওঠে। তার চেতনাজগতে তখন ফলি মাছ ছাড়া অন্য সবকিছুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। 
অন্যদিকে তখন বিধাতার পৃথিবীতে ভিন্ন একটা নাটক প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কেবল চন্দমোহনের অংশগ্রহণটা বাকি ছিল। 
ফলি মাছ নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই চন্দ্রমোহনের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু, ফলি মাছগুলো নিমেষে বর্জ্যে পরিণত হলো। 
ইতিমধ্যে চন্দ্রমোহনের বাড়ি থেকে বের হওয়া কান্নার শব্দ গ্রামের অনেক দূর ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়াতে ছড়াতে সেটা গিয়ে চন্দ্রমোহনের মর্মমূল পর্যন্ত বিদ্ধ করে এবং তাকেও বাধ্য করে সেই সমবেত কান্নায় যোগ দিতে। চন্দ্রমোহনের যমজ দুই ছেলে জন্মেছিল যেমন একসঙ্গে, তেমনি মারাও গেল একসঙ্গে।
পাঠক, গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু চন্দ্রমোহন শেষ হতে দিল না। লোকজন যে এত দিন আড়ালে বলাবলি করছিল ‘চন্দ্রমোহনের মাথা খারাপ হয়ে গেছে’ সেটা প্রমাণের জন্য আর কোনো সার্টিফিকেটধারী ডাক্তারের দরকার পড়ল না। চন্দ্রমোহন নিজেই তার ব্যবস্থা করে দিল। 
যমজ দুই ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে চন্দ্রমোহনকে সারা দিন হ্রদের পানিতে নৌকার ওপর ভাসতে দেখা যায়। ধানের জমিতে বিষ দেয়ার পিচকারি হাতে হ্রদের পানিতে যেখানে যেখানে নাইলোটিকা মাছ ভেসে উঠছে, সেখানে পিচকারি দিয়ে বিষ ছিটিয়ে দিচ্ছে। হ্রদের সব নাইলোটিকা মেরে ফেলবে। 
প্রথম প্রথম বাজার থেকে বিষ সংগ্রহ করলেও পরে আর কেউ তাকে বিষ দেয় না। তাতেও চন্দ্রমোহনের কোনো সমস্যা নেই। বিষ মেশানো পানি শেষ হলেই সে গিয়ে পাহাড়ের জঙ্গলে ঢোকে। সেখানে কে তাকে মানা করবে অথবা বাধা দেবে? পাহাড়ি জঙ্গলে ‘মেইল লতা’র (একধরনের বিষাক্ত লতা, যার শিকড়ের রস পানিতে মেশালে মাছ মরে যায়) কোনো অভাব নেই।
 চাকমা। জন্ম ১৯৭৮

ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপন
addd
addd
addd
addd

Perfect Facebook Like Box Sidebar