দ্বিতীয় দফায়ও বিএনপির সাফল্য

elec01উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও সাফল্য পেল বিএনপি। প্রথম ধাপের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপেও তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের পেছনে ফেলেছে।
দেশে চতুর্থবার অনুষ্ঠিত এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফা ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর। কিন্তু বিচ্ছিন্ন সংঘাতে দ্বিতীয় দফার ভোটের উৎসব ম্লান হয়ে গেছে।
যশোরের চৌগাছা মডেল বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভেতরেই বিএনপি-সমর্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জহুরুল ইসলামের (বাঁয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরা) ওপর হামলা হয়। হামলা থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছেন তিনি।গতকাল ১১৫টি উপজেলায় সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। এরপর শুরু হয় গণনা। রাত আড়াইটা পর্যন্ত ১০৮টি উপজেলার বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফল পাওয়া গেছে। তাতে ৫০টি উপজেলায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন ৪২টিতে। এ ছাড়া জামায়াতের আটজন, জাতীয় পার্টির একজন, বিএনপির দুজন ও elec02আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী, নির্দলীয় একজন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) দুজন ও ইউপিডিএফের একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফার ভোটে ৯৭টি উপজেলার মধ্যে বিএনপি ৪৪টি, আওয়ামী লীগ ৩৪টি, জামায়াত ১২টি, জাতীয় পার্টি একটি ও ছয়টি উপজেলায় অন্যরা জয়ী হন।
বিদ্যালয়ের মাঠেই তাঁকে কিল-ঘুষি মারা হচ্ছেগতকাল অন্তত ৩৫টি কেন্দ্রে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে নিহত হন একজন।
বিভিন্ন স্থানে সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের ঘিরেই ছিল ভোট কারচুপি ও ভোটকেন্দ্র দখলে রাখার অভিযোগ। প্রথম ধাপে ভালো ফল করায় দ্বিতীয় ধাপে বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের ময়দানে ছিলেন বেশ উজ্জীবিত। সরকারি দলের প্রার্থীরা কোনো কোনো এলাকায় ভোট কারচুপির চেষ্টা করলে বিএনপির সমর্থকেরা তা রুখে দেন। যেখানে শক্তিতে পেরে ওঠেননি, সেখানে ভোট বর্জন করেছেন। বরিশাল, কুষ্টিয়া, ফেনী, যশোরসহ কয়েকটি স্থানে বিএনপি বা ১৯-দলীয় জোটের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে কর্মসূচি দিয়েছেন।
elec03হামলার পর গুরুতর আহত জহুরুল ইসলামনির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, জোর করে সিল মারার বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলো কিছু এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন উপজেলার ৩৪টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা গুলি ছুড়েছেন। আইন লঙ্ঘন করায় বিভিন্ন স্থানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা শাস্তি দিয়েছেন ২১৬ জনকে।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় নির্বাচনী সংঘর্ষে সাদ্দাম হোসেন (১৮) নামের একজন যুবক নিহত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্যসহ ১০ জন আহত হন। বাগেরহাটের ফকিরহাটে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেনকে র‌্যাব-বিজিবির সদস্যরা মারধর ও গ্রেপ্তার করেন। এরপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হামলার ছবি তোলার পর প্রথম আলোর আলোকচিত্রীর ক্যামেরা কেড়ে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর এক কর্মী । ছবি: প্রথম আলো ও সংগৃহীতএসব ঘটনার বাইরে যেসব উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে ছিল উৎসবের আবহ। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের মানুষ। বিশেষ করে নারী ভোটারদের বিপুল উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচন কাগজে-কলমে অরাজনৈতিক। তবে রাজনৈতিক আবহের মধ্য দিয়েই ভোটাররা পছন্দের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।
elec04প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। তারা চর দখলের মতো কেন্দ্র দখল করেছে।
তবে আওয়ামী লীগের দাবি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বহির্বিশ্বে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপন
addd
addd
addd
addd

Perfect Facebook Like Box Sidebar